রাত ৮:৫৫, ২৪শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ







যে কোনো সময় উড়ে যেতে পারে পুরো গ্রাম

সুইজারল্যান্ডের পাহাড়ঘেঁষা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোহনীয় মিথহোলজ গ্রাম। সবুজ গাছপালা সমৃদ্ধ গ্রামের ল্যান্ডস্কেপ অসাধারণ। চোখ জুড়ানো, মনোরম। কিন্তু যে কোনো সময় বিস্ফোরণে উড়ে যেতে পারে ১৭০ অধিবাসীর এ ছোট্ট গ্রামটি। এমনই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে সুইস কর্তৃপক্ষ। নিশ্চিহ্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও গ্রাম ছাড়তে নারাজ বাসিন্দারা। বিবিসি।

সুইজারল্যান্ডের কিনডের উপত্যকা। মাথার উপর উজ্জ্বল আকাশ। চারপাশে গগণভেদী পাহাড়ের মাঝখানে রয়েছে আলোচ্য গ্রামটি। প্রতিটি বাড়ি তৈরি হয়েছে প্রায় একই আদলে। একতলায় গবাদিপশুর ঘর আর দোতলায় নিজেদের থাকার জায়গা। আল্পস পর্বতমালার পাদদেশে প্রায় সব গ্রামেই বাড়িগুলো গড়ে উঠেছে এই কায়দায়। নিজেদের ব্যস্ত জীবন থেকে ছুটি নিয়ে সব দুশ্চিন্তা দূর করতে পর্যটকদের জন্য আদর্শ ঠিকানা হতে পারে এই মিথহোলজ গ্রাম।

এই গ্রামের প্রতিটি ঘরের প্রতিটি মানুষের কপালে কিন্তু সারাক্ষণই দুশ্চিন্তার ভাঁজ, অজানা আতঙ্ক। প্রতি মুহূর্ত মৃত্যুর হাতছানিকে সঙ্গে করেই তাদের বসবাস। ৭৪ বছর আগে ঘটে যাওয়া ভয়ংকর ইতিহাস আজও পিছু ছাড়েনি গ্রামবাসীর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সুইস সেনাদের অস্ত্রভাণ্ডার ছিল এই পাহাড়ি গ্রামে। মাটির তলায় থেকে গোপনে তারা এই অস্ত্রভাণ্ডার পরিচালনা করত। তাতে মজুত ছিল প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলে। গোলা-বারুদের রমরমা দেখেই দিন কাটিয়েছেন এই এলাকার বাসিন্দারা।

১৯৪৫ সালে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা হলে বাসিন্দারা ভেবেছিলেন আর কোনো বিস্ফোরণ, গোলাগুলির সম্মুখীন হতে হবে না তাদের। দুবছর পর দুঃস্বপ্নের রাত আসে তাদের জীবনে। ১৯৪৭ সালের কথা। গভীর রাতে আচমকা কেঁপে ওঠে গোটা গ্রাম। গ্রামবাসীরা মনে করেছিলেন ভূমিকম্প হয়েছে। কিন্তু বাইরে বেরিয়ে তাদের চোখে ভেসে ওঠে এক বিভীষিকাময় দৃশ্য। চারদিক দাউদাউ করে জ্বলছিল। প্রাণে বাঁচার মরিয়া চেষ্টায় হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছিল বাসিন্দাদের মধ্যে। এক রাতের মধ্যেই পুরো গ্রাম পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। হতাহতের সংখ্যা ছিল অনেক। আগুনের গ্রাস থেকে রক্ষা পায়নি গ্রামের একটি ঘরও। ওই বিস্ফোরণের শব্দ পৌঁছেছিল ১০০ মাইল পর্যন্ত। পরে জানা যায়, অস্ত্রভাণ্ডারে মজুত বিস্ফোরকে বিস্ফোরণেই এই পরিণতি হয়েছিল। রাতারাতি গোটা গ্রাম প্রায় জনশূন্য হয়ে গিয়েছিল।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সাত হাজার টন বিস্ফোরকে বিস্ফোরণ ঘটেছিল সেদিন। এর পরের বছর ১৯৪৮ সালে সুইস সরকার এই গ্রামকে নিরাপদ ঘোষণা করে এবং আবারও বসতি গড়ে তোলার সবুজ সংকেত দেয়। একে একে বাসিন্দারা গ্রামে ফিরে আসেন। সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন করে বাড়ি বানিয়ে নেন যে যার মতো করে। আর কোনো বিপদ আসবে না এ বিষয়ে তারা নিশ্চিত ছিলেন।

সুইস সরকারের পক্ষ থেকেও তেমনই আশ্বাস মিলেছিল। তাই অনেকেই সঞ্চয়ের অনেকটা খরচ করে বানিয়েছিলেন স্বপ্নের বাড়ি। হঠাৎই বাজ পড়ার মতো খবরে মুষড়ে পড়েন মিথহোলজ গ্রামের বাসিন্দারা। ২০১৮ সালে সুইস সরকার এই গ্রামে আবারও প্রচুর পরিমাণ বিস্ফোরকের সন্ধান পায়। এখনো সাড়ে তিন হাজার টন বিস্ফোরক রয়েছে গোপন অস্ত্রভাণ্ডারে। গ্রাম খালি করে বিস্ফোরক অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করার কথাও ওই সময়ে ঘোষণা করে সরকার। তা না করলে যে কোনো দিন আবারও ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠতে পারে গোটা গ্রাম। নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারেন জেনেও ভিটে ছাডতে নারাজ অনেক গ্রামবাসী।