বাতাসে পোড়া রক্তের গন্ধ
নিশ্বাসে নিশ্বাসে কষ্টের দাপাদাপি
তবে এইভাবে আর কেন বেঁচে থাকা
এস প্রতিবাদে প্রতিরোধ গড়ে তুলি
এই প্রত্যয়ে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ যাত্রা করেছিল অনাদিকালের উদ্দেশ্যে ভোরের সূর্যের প্রত্যাশায়। বাংলাদেশের আকাশে তখন দুর্যোগের ঘনঘটা। বিএনপি-জামাত জোট আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এবং নীলনকশার নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করে। পরবর্তীতে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। ২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর ক্ষমতা দখল করার আগের দিন রাত থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায় বিএনপি-জামাত জোট। দলের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ঘর ছাড়া বাড়িছাড়া দেশছাড়া করে। হত্যা খুন গুম ছিল বিএনপির নিত্যদিনের বিষয়। এরূপ একটি ভয়াবহ সময়ে ২০০২ সালের ৬ জুলাই
গণতন্ত্রের মানস কন্যা
বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত
জাতির জনকের কন্যা
জননেত্রী শেখ হাসিনা
সাবেক ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। উদ্দেশ্য ছিল চারদলীয় জোট সরকারের হত্যা-সন্ত্রাস নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং যুব নারী সমাজকে সুসংগঠিত করে, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা। সংগঠন সৃষ্টির শুরুটা খুব সুখকর ছিল না আমাদের জন্য। পারিপার্শ্বিক কারণে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির দশজনকে ঠিক মতো কর্মসূচিতে পাওয়া যেত না। ভীষন দুশ্চিন্তা হত, তাহলে কি অকালেই ঝরে যাবে প্রাণের সংগঠনের অগ্রযাত্রা। আমরাতো জননেত্রী শেখ হাসিনার পা ছুঁয়ে শপথ নিয়েছি। বিএনপি-জামাত জোটের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাজপথে থেকে লড়াই করব। রক্ত দেবো, লাশ হব তবুও ঘরে ফিরবো না, যতদিন না পর্যন্ত
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। অল্পসংখ্যক সাহসী নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়েই নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতে ঢাকা মহানগরীর থানা কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কমিটি গোছাবার কাজ করতে গিয়ে কত যে অপমানিত হয়েছি তা বলাই বাহুল্য। কেননা সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়টিতে প্রতিটি এলাকার নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত নির্যাতন নিপিরণের শিকার হচ্ছিল।অনেকেই জেলখানায় বন্দি ছিলেন। ওই মুহূর্তে স্থানীয় নেতারা নতুন কোন নারী সংগঠন কে স্বাগত না জানিয়ে উল্টো তীর্যক মন্তব্য করে বলেছিলেন,” এটি আবার কোন নতুন দোকান খুলেছেন”। যদিও কিছু কিছু নেতৃবৃন্দের সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছিলাম। একদিকে আন্দোলন-সংগ্রাম অন্যদিকে সংগঠনের কলেবর বৃদ্ধি করা খুবই দুরূহ কাজ ছিল। ছাত্রলীগের সাবেক নারী নেতৃত্ব খুঁজে জেলা কমিটি গঠন করতে খুব বেগ পেতে হয়েছিল। যদিও সংগঠন তৈরির তিক্ততা আজ আর মনে হয়না বরং সৃষ্টি সুখের উল্লাসে রুদ্ধ প্রাণের পল্বলে বান ডেকে যায়। যুব মহিলা লীগের প্রতিটি নির্ভীক লড়াকু নেতাকর্মী তাদের শ্রম ঘাম ভালোবাসায় তিলে তিলে এই সংগঠনটি তৈরি করেছে। আন্দোলন-সংগ্রামে মৃত্যুকে পরোয়া করেনি। প্রতিটি নেতাকর্মী আজও শরীরে বহন করছে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের বর্বরোচিত হামলার চিহ্ন। সংগঠনের একজন নেতাকর্মীকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না যাদের বিরুদ্ধে অন্যায় ভাবে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়নি। ২০০৩ সালে আওয়ামী লীগ ঘোষিত একটি হরতালে যুব মহিলা লীগের পিকেটিংয়ের কথা মনে পরলো।কমলাপুর রেল স্টেশনের সামনে আমরা পিকেটিং কর্মসূচি দিয়েছিলাম। শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে যখনই মিছিলটি বের করেছি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ বেপরোয়াভাবে আমাদের ওপর হামলা চালায়। টিয়ার সেল ছোড়ে, ছড়া গুলি চালায়। আমরা সকলেই পেছনের দিকে ছুটতে থাকি। পুলিশের হাতে ধরা পড়া চলবে না, তাহলেই জেলে যেতে হবে। তিনদিনের হরতাল কর্মসূচি রয়েছে, পিকেটিংয়ের নেতাকর্মী সংকট হয়ে যাবে। তাই নির্দেশনা ছিল কাউকে গ্রেপ্তার হওয়া চলবে না। দৌড়াতে দৌড়াতে কমলাপুর রেল স্টেশনের বস্তিতে ঢুকে পড়েছিলাম। পুলিশ পেছনে পেছনে তাড়া করল, খিলগাঁও থানার যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমত আরা মেনু সহ ১০ জনকে গ্রেফতার করে কোমরে দড়ি বেঁধে গরুর মত টানতে টানতে থানায় নিয়ে যায়। গুরুতর আহত অভুক্ত নেতাকর্মীরা ডেমরা থানার অন্ধকার ঘরের মধ্যে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। তাদেরকে সন্ধান পেয়ে মুক্ত করবার জন্য রাত দেড়টার সময় আমরা কয়েকজন মিলে থানায় উপস্থিত হলাম। প্রশাসন কোন কথাই শুনছে না, খাবার নেই, পানি নেই, চিকিৎসা নেই। উপায়ান্তর না দেখে মধ্যরাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেছিলাম। সার্বিক পরিস্থিতি তাঁকে বললাম, তিঁনি সবই জানতেন এবং আমাদের জন্য দুশ্চিন্তা করছিলেন। মাননীয় নেত্রী তাৎক্ষণিকভাবে ডাক্তারের ব্যবস্থা করলেন, সাহারা আপাকে পাঠালেন। থানায় মুচলেকা দিয়ে তাদের মুক্ত করে ভোর চারটার সময় ভ্যানে করে বাড়ি ফিরলাম। যদিও পরের দিন আবার সকাল সাতটায় দ্বিতীয় দিনের হরতাল সফল করার জন্য পিকেটিং এর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলাম। ওই সময়টিতে প্রতিটি দিন এভাবেই আমাদের কেটেছে। একটি নতুন সংগঠন কে নেতাকর্মীরা জীবনকে তুচ্ছ করে এত ভালবেসেছিল জাতির জনকের আদর্শের প্রেরণায়। সংগঠনের পরতে পরতে জননেত্রী শেখ হাসিনার স্নেহ মায়া-মমতা আছে। মাননীয় নেত্রীর সঠিক দিকনির্দেশনার আলোকেই আমরা একটি নতুন সংগঠন তৈরি করতে পেরেছি। যেখানেই বাধা এসেছে সেখানেই তিঁনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
আজ যুব মহিলা লীগের ১৯ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। এই শুভ মুহূর্তে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে জাতির জনক কে স্মরণ করছি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জননেতা ওবায়দুল এর প্রতি। সংগঠন সৃষ্টিতে তার অবদান অপরিসীম । যুব মহিলা লীগের সংগ্রামী সভাপতি নাজমা আকতার এবং নির্ভীক দৃঢ়প্রত্যয়ী প্রতিটি নেতাকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি শুভকামনা রইল।
বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ প্রথম ২০০২ সালের ২৮ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে আওয়ামী লীগের কারারুদ্ধ জাতীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। সেই কর্মসূচিতে তৎকালীন রমনা থানার ওসি জনাব মাহাবুব এর নেতৃত্বে আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করে। সংগঠনের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ ৬০ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। একদিকে রাজপথে নির্মম পুলিশি নির্যাতন অন্যদিকে গ্রেপ্তার মিথ্যা মামলা রিমান্ডে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন জেলে প্রেরণ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। বাড়িতে দুধের শিশু রেখে কারা নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। সিজারের অপারেশনের জায়গায় সদ্যপ্রসূত মাকে বুটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। মুখোমুখি হতে হয়েছে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামাত জোট গ্রেনেড হামলা চালায়। মহান সৃষ্টিকর্তা মাননীয় নেত্রী কে নিজ হাতে বাঁচিয়ে দেন। সেই হামলায় যুব মহিলা লীগের নেতা-কর্মীরা আহত হয়েছিল।
শুধু গণতান্ত্রিক আন্দোলনই নয়, জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায়, বন্যা ক্ষরা দৈব দুর্বিপাকে, নারীর অধিকার রক্ষায়, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিতে প্রতিবাদী হয়েছে যুব মহিলা লীগ। আওয়ামী লীগ ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচি পালনে প্রতিনিয়ত সোচ্চার প্রিয় সংগঠন।
সেনাসমর্থিত ফখরুদ্দিন আহমেদের অবৈধ ১/১১ সরকার জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে বন্দি করে রাখে। নেত্রীর মুক্তির দাবিতে যুব মহিলা লীগ আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলেছিল। প্রাণের নেত্রীকে গ্রেফতার করা হলে কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রতিবাদে আন্দোলন করলে দুজন যুব মহিলা লীগ নেত্রী কে গ্রেফতার করে।
জরুরি অবস্থার বিধি-নিষেধ, পুলিশি নির্যাতন ও গ্রেপ্তার উপেক্ষা করে যুব মহিলালীগ সর্বপ্রথম নেত্রীর মুক্তির দাবিতে ২০০৮ সালের ২০ মার্চ বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা ডেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গণ অনশন কর্মসূচি পালন করে। সেই কর্মসূচি থেকে আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতৃবৃন্দ নেত্রীর মুক্তির জন্য হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ আদালত প্রাঙ্গণে নেত্রীর মুক্তির দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে যুব মহিলা লীগ।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বপ্রথম যুব মহিলা লীগ ২০০৮ সালের ২ এপ্রিল নেত্রীর মুক্তির দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি গ্রহণ করে।
২০০৮ সালের ২১ এপ্রিল নেত্রীর মুক্তির দাবিতে যুব মহিলা লীগ সর্বপ্রথম সারাদেশ থেকে দু লক্ষ মা-বোনের স্বাক্ষর সম্বলিত স্মারকলিপি তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেয়।
নেত্রী মুক্ত না হলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সংকটাপন্ন হত।
তাই জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তি আমাদের কাছে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপি জামাতের অগ্নিসংযোগের অপরাজনীতির মোকাবেলায় যুব মহিলা লীগ পালন করেছে সাহসী ভূমিকা। দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র ও জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান এর চেষ্টা বিএনপি জামাতের অগ্নি সন্ত্রাস মহামারী করোনা, সবকিছু মোকাবেলা করে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে চলেছি দুর্বার গতিতে। উন্নয়নের মহাসড়কে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্ব দরবারে উন্নয়ন সমৃদ্ধির এক বিস্ময় বাংলাদেশ। আর এই অগ্রযাত্রায় জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যুব মহিলা লীগ অতীতের মতো সকল ষড়যন্ত্র অপরাজনীতিকে রুখে দেবে। এগিয়ে যাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণে।
সেই স্বপ্নযাত্রায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাহু জননেত্রী শেখ হাসিনার পাশে আছে যুব মহিলা লীগ।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক- যুব মহিলা লীগ