সুরের সহযোগে শুরু হয় অনুষ্ঠান। সুরাশ্রিত সেই বাণীর মাঝে প্রকাশিত হয় বর্ষার প্রতি জননন্দিত লেখকের অনুরাগের বারতা। লেখকের রচিত গানকে কণ্ঠে তুলে নেন তার জীবনসঙ্গী মেহের আফরোজ শাওন। গেয়ে শোনান যদি মন কাঁদে তবে চলে এসো এক বরষায়/এসো ঝরঝর বৃষ্টিতে/এসো জলভরা বৃষ্টিতে …।
পরের পরিবেশনায় গাইলেন ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই চিরদিন কেন পাই না’। এভাবেই সঙ্গীতকে সঙ্গী করে এগিয়ে যায় এক্সিম ব্যাংক অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কারের আয়োজনটি। নবীন-প্রবীণ দুই লেখকের হাতে তুলে দেয়া হলো এ পুরস্কার।
পুরস্কারজয়ী দুই লেখক হলেন সেলিনা হোসেন ও ফাতেমা আবেদীন।
শুক্রবার বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে বর্ণিল আয়োজিত লেখকদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য সেলিনা হোসেনকে এবং নবীন সাহিত্যশ্রেণীতে ফাতেমা আবেদীনকে তার ‘মৃত অ্যালবাট্রস চোখ’ গল্পগ্রন্থের জন্য এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কার হিসেবে সেলিনা হোসেন পেয়েছেন পাঁচ লাখ টাকা এবং ফাতেমা আবেদীন পেয়েছেন এক লাখ টাকা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সম্মাননীয় অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল, মেহের আফরোজ শাওন ও এক্সিম ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ মোঃ আব্দুল বারী। স্বাগত বক্তব্য দেন অন্যদিনের সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
সেলিনা হোসেনকে নিবেদিত শংসা বচন পাঠ করেন বিচারকম-লীর অন্যতম সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। ফাতেমা আবেদীনকে নিয়ে লেখা শংসা বচন পাঠ করেন বিচারকমন্ডলীর আরেক সদস্য জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন।
পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশে সেলিনা হোসেন বলেন, জীবনেরই প্রতিফলন ঘটে সাহিত্যে। তাই জীবনবোধকে শাণিত করে সাহিত্য। বিকশিত করে মননকে। তাই নতুন প্রজন্মকে সাহিত্য পাঠে আগ্রহী করে তুলতে হবে। শিক্ষাদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সাহিত্যপাঠে আগ্রহী করলে তারা মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।
ফাতেমা আবেদীন বলেন, আমি সাধারণ মানুষের জীবনের কথাই লিখেছি সাহিত্যে। আর জীবনের প্রতিচ্ছবি মেলে ধরা সেই গল্গগ্রন্থের মাধ্যমে হুমায়ূন আহমেদের পুরস্কারটি আমার কাছে বিশেষ অর্জন। লেখক হিসেবে আমি স্বীকৃতি চেয়েছিললাম। এই পুরস্কারের মাধ্যমে সেই স্বীকৃতি পেয়েছি। পুরস্কার আমাকে সামনে আরও বেশি লিখতে উৎসাহী করবে। আগামী দিনের সেসব লেখনীর মাধ্যমে আমি সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, পাঠক হুমায়ূন আহমেদকে হৃদয় দিয়ে ভালবেসেছে। কিন্তু এ দেশের অনেক বড় লেখক জীবদ্দশায় হুমায়ূন আহমেদকে গ্রহণ করেননি। তবে হুমায়ূন এসব বিষয়কে পাত্তা দেননি।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, টিভি নাটকে আমার জনপ্রিয়তার নেপথ্যে রয়েছে হুমায়ূনের অবদান। তার নাটকে অভিনয় করেই আমি এই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছি। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, বৈমানিক মেয়ে লারাকে হারানো বেদনাকে বহন করেই চলছে সেলিনা হোসেনের লেখক জীবন।