লিয়ন মীর: করোনা টিকা গ্রহণকারীদের সবাই সুস্থ ও ভাল আছেন। টিকা নেয়ার দুই থেকে তিনদিনের মধ্যেও তাদের মধ্যে কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি। নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে তাদের প্রতেক্যের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ টিকা প্রদানের যাত্রা শুরু হয়েছে। গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে পাঁচ শ্রেণী-পেশার পাঁচজনের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের দ্বিতীয় দিন শনিবারও ভাল আছেন সবাই। কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশে বুধ ও বৃহস্পতিবার ৫৭৭ জনকে টিকা দেয়া হয়। এর মধ্যে পাঁচ শ্রেণী-পেশার মধ্যে তিনজন বুধবার টিকা নিয়েছেন। অন্য দুজন বৃহস্পতিবার টিকা নেন। তারা হলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ডায়ালাইসিস ইউনিটের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ফরহাদ উদ্দিন হাসান চৌধুরী, ট্রাফিক পুলিশের মতিঝিল বিভাগের কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম এবং এনটিভি অনলাইনের সাংবাদিক মাসুদ রায়হান পলাশ।
শনিবার সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী খালিদ সাংবাদিকদের বলেন, টিকা নিয়েছি ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে ৩০ মিনিটের মধ্যে দেখা দেয়। আমার এখনও কিছু হয়নি। আমি সুস্থ আছি। তিনি বলেন, সকাল ৯টার সময় একটা অনুষ্ঠান ছিল, সেই অনুষ্ঠান শেষ করে বিকেল সাড়ে তিনটার আরেকটা অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছি। আমার শরীরে কোন সমস্যা দেখা দেয়নি। তিনি আরও বলেন, আমার বয়স ৬৫। এর আগে অন্য কোন টিকা নেয়ার কারণে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়নি। আমার বর্তমানে কোন জটিল রোগও নেই। দেশবাসীর উদ্দেশে বলতে চাই, দেশকে করোনামুক্ত করতে আপনারা টিকা নেন।
দেশে বুধবার প্রথম করোনার টিকা নিয়েছেন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ডায়ালাইসিস ইউনিটের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। তিনি বলেন, টিকা নিয়ে বাড়িতেই অবস্থান করছি। আমাদের হাসপাতালে ১৫ দিন কাজ করার পর, ১৫ দিন ডিউটি থাকে না। যে কারণে টিকা নেয়ার পর দুইদিন ধরে বাসাতেই আছি। আমার বাসায় কোন কাজের লোক নেই। বাসার সব কাজ আমিই করছি। অন্য কোন জটিল রোগ দেখা দেয়নি বলে জানান ৩৮ বয়সী এই নার্স ।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীদের মধ্যে বৃহস্পতিবার প্রথম টিকা নিয়েছেন ডাঃ ফরহাদ উদ্দিন হাসান চৌধুরী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, টিকা দেয়ার দিন রাতে জার্নি করে গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম আসছি। সপ্তাহে কিছু দিন এখানে চেম্বার করি। শুক্রবার সকালে রোগী দেখেছি। কোন ধরনের সমস্যা অনুভব করিনি। যে স্থানে টিকা দিয়েছে, সেই স্থানে রাতে একটু ব্যথা ছিল। তবে এ জন্য কোন ওষুধ খাইনি। তার প্রেসার কিংবা ডায়াবেটিসের মতো কোন রোগ নেই বলে জানান ৩৬ বছর বয়সী এই চিকিৎসক।
পুলিশ সদস্যদের মধ্যে প্রথম টিকা নিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশের মতিঝিল বিভাগের কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম। টিকা নেয়ার পর বৃহস্পতিবার ছুটিতে থাকলেও শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকাতে দায়িত্ব পালন করেছেন জানিয়ে ৩১ বছর বয়সী দিদারুল বলেন, এখন পর্যন্ত কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। আগের মতো স্বাভাবিক রয়েছি বলে জানান দিদারুল ইসলাম।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, যারা টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন দেখা যায়নি। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সব সময় সঙ্গে সঙ্গে হয় না। টিকা নেয়া প্রত্যেকেই বাড়ি চলে গেছেন। একটা বিষয় স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। যে কোন টিকাতেই কিন্তু মৃদু টাইপের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তবে এতে মারাত্মক কিছু আছে কিনা তা আমরা দেখছি। আমাদের টিম তৈরি করা আছে তাদের ফলোআপ করার জন্য।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, যারা টিকা নিয়েছেন তারা সবাই ভাল আছেন। কোন রকমের অসুবিধা দেখা যায়নি।