সকাল ১০:১৪, ২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ







খাল দখল করে মাছ চাষ, কৃষকের স্বপ্ন এখন পানিতে ভাসছে

সামরুজ্জামান (সামুন), কুষ্টিয়া ড্রেনেজ খাল দখল করে মাছ চাষ করছে স্থানীয় দুই মসজিদ কমিটি। তবে নিয়মিত খনন করা হয় না খাল। এতে অবাধ পানি প্রবাহে বাঁধার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পাকা ধান, পাট, কলার বাগানসহ কয়েক হাজার বিঘা কৃষি জমি প্লাবিত হয়েছে।

এ চিত্র কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের চর গোবিন্দপুর বিলে। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।

এলাকাবাসী ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চর গোবিন্দপুর বিল থেকে স্থানীয় উজ্জ্বলের বাড়ি হয়ে গড়াই নদী পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার ড্রেনেজ খাল। এই খাল দিয়েই বিলের অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত হয়। খাল খনন করার শর্তে পানি প্রবাহের খাল দখল করে কয়েক বছর ধরে মাছের চাষ ও ব্যবসা করে গোবিন্দপুর ও চর এতনামপুর জামে মসজিদ কমিটি। কিন্তু মাছ চাষের ব্যবসা চলমান রাখলেও খাল খননে দুটি মসজিদ কমিটির উদ্যোগ নেই। ফলে কয়েক দিনের বৃষ্টিতেই প্লাবিত হয়ে গেছে বিলটি।

পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি হওয়ার কারণে গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পাকা ধান, পাট, কলার বাগানসহ কয়েক হাজার বিঘা জমির ফসল প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছেন সেখানকার কৃষকরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এক সময়ের প্রায় ৬০ ফুট প্রস্থের খালটি সংকীর্ণ হয়ে ৫ থেকে ৭ ফুটে দাঁড়িয়েছে। খালের মধ্যেই ধানের চাষ করা হয়েছিল। খননের অভাবে খালের ভেতরে গভীরতা নেই। বৃষ্টিতে খালের পানি প্লাবিত হয়ে ভাসছে কৃষকের স্বপ্নের পাকা ধান ও পাট। কোথাও হাঁটু সমান আবার কোথাও কোমর সমান পানিতে দাঁড়িয়ে ধান কাটছেন কৃষকরা। ধানে পচন লেগেছে।

চর গোবিন্দপুর বিলের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক টুটুল বলেন, ‘এখানে পাঁচ বিঘা জমিতে ধান ও এক বিঘা জমিতে পাঠের চাষ রয়েছে। পাকা ধান এখনো পানিতে ভাসছে। পাটের চারা পানিতে ডুবে গেছে। দ্রুত পানি অপসারণ করা না গেলে আমার লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হবে।’

কৃষক টুটুলের অভিযোগ, ড্রেনেজ খাল দখল করে মসজিদ কমিটি মাছের ব্যবসা করে। কিন্তু খাল খনন করে না। ফলে পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি হয়ে বিলের সব ফসল পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে।

স্থানীয় কৃষক আবুল শেখ জানান, মসজিদ কমিটির কারণে বিলের কয়েক হাজার বিঘা জমির ফসল পানিতে ডুবে গেছে। এতে কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হবে। দ্রুত খালটি খনন করে এ সমস্যার সমাধান হওয়া প্রয়োজন।

কৃষক ইসলাম শেখ বলেন, ‘পাকা ধান পানিতে ভাসছে। গাড়ি-ঘোড়া আসতে পারছে না। তাই ধান কেটে পানিতে ভাসিয়ে ডাঙায় নিচ্ছি।’

বিলে তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন গোবিন্দপুর গ্রামের কৃৃষক হামিদুল ইসলাম তিনি বলেন, ‘দুই মসজিদ কমিটি খালের মাছ বিক্রি করে খায়। কিন্তু বারবার বলার পরও তারা খাল খনন করে না। এতে পানি জমে পাকা ধান ডুবে গেছে। ধান কাটতে না পারলে পরিবার নিয়ে কী খাবো? দুশ্চিন্তায় ঘুম আসে না।’

পানিতে পাট ক্ষেত ডুবে গেছে কৃষক জাহাঙ্গীর আলমের। তিনি বলেন, ‘দ্রুত পানি না সরালে গাছ মরে যাবে। এতে অনেক ক্ষতি হবে।’

এ বিষয়ে গোবিন্দপুর জামে মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার আশরাফুল আলম বলেন, খালের মাছ বিক্রি করে দুই মসজিদের উন্নয়ন করা হয়। তবে নিয়মিত খাল খনন করা হয় বলে দাবি করেন তিনি।

মসজিদ কমিটির সদস্য মো. মোস্তফা বলেন, ‘এতদিন কারও কোনো অভিযোগ ছিল না। এবার অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

যদুবয়রা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। কৃষকদের স্বপ্ন পানিতে ভাসছে। খাল খননের জন্য ইউএনও স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মন্ডল বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরেছি। কৃষকদের স্বপ্ন বাঁচাতে খাল খননের জন্য যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।