ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নির্ধারিত দিন আগামী বৃহস্পতিবার দুদকে উপস্থিত না হলে কিংবা সময় চেয়ে আবেদন না জানালে অভিযোগের বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হারাবেন তিনি।
এদিকে একাধিক সূত্রের খবর, দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসন্ধান শুরু করার পর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সপরিবারে দেশ ছেড়েছেন বেনজীর। এরপর বেনজীর ও তার পরিবারের ৬২৭ বিঘা (৩৩ শতকে এক বিঘা হিসাবে) জমি ও ৩০টি ব্যাংক হিসাবসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদের সন্ধান পেয়ে সেগুলো জব্দের জন্য গত ২৩ ও ২৬ মে আদালতে আবেদন করে দুদক। আদালত তা মঞ্জুরের দুদিন পর বেনজীরকে তলব করে নোটিশ দেয় দুদক। নোটিশে আগামী ৬ জুন সকাল ১০টায় তাকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ৯ জুন তার স্ত্রী ও দুই মেয়েকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে। কীভাবে তিনি এই বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন সে বিষয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে নোটিশে।
এক মাস আগে বেনজীর আহমেদের সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এরপর থেকে গণমাধ্যম বা কোথাও তাকে আর দেখা যায়নি। নির্ধারিত সময়ে দুদকে তিনি উপস্থিত হবেন কিনা, এ নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়। এ অবস্থায় দুদকের তলবে বেনজীর হাজির না হলে পরবর্তী করণীয় কী হবে?- এমন প্রশ্নে ঢাকা মহানগর জজ আদালতে দুদকের প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর আমাদের সময়কে বলেন, ‘ওনাকে (বেনজীর) যে পত্র দেওয়া হয়েছে, সেখানে তার উপস্থিতির বিষয়ে বলা থাকলে তাকেই উপস্থিত থাকতে হবে। আবার আইনজীবী বা প্রতিনিধির মাধ্যমে যদি বক্তব্য প্রদানের বিষয়ে বলা হয়ে থাকে, তা হলে সেভাবেই বক্তব্য দিতে পারেন।’ এই আইনজীবী বলেন, ‘আমার মনে হয়, ওনার উচিত সশরীরে উপস্থিত হয়ে আনীত অভিযোগগুলো সত্যি নাকি মিথ্যা, তা জানানো।’
হাজির হওয়ার বিষয়ে দুদকে সময় চেয়ে আবেদন জানানোর সুযোগ আছে কিনা, জানতে চাইলে দুদকের এই প্রসিকিউটর বলেন, ‘চিঠি পাওয়ার পর যদি আপনি না আসেন, তা হলে দুদক ধরে নেবে যে, এ বিষয়ে আপনার কোনো বক্তব্য নেই। তখন আইন অনুযায়ী অনুসন্ধান ও তদন্ত চলতে থাকবে।’
পরবর্তীকালে বক্তব্য দেওয়ার কোনো সুযোগ আছে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তাকে তার বক্তব্য দেওয়ার সব ধরনের সুযোগ দেওয়া হবে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বক্তব্য দিতে হবে। পরে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ থাকবে না।’
দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ দেশ ছেড়েছেন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তিনি দেশে আছেন নাকি দেশ ছেড়েছেন- গতকাল সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘আমি সঠিক জানি না, তিনি আছেন নাকি চলে গেছেন। আমাকে জেনে কথা বলতে হবে।’
বেনজীরের বিপুল বিত্তবৈভব নিয়ে গত ৩১ মার্চ ও ৩ এপ্রিল গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে সাবেক এই আইজিপি ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামে প্রায় ১৪০০ বিঘা জমিতে একটি ইকো রিসোর্ট গড়ে তুলেছে বেনজীর পরিবার। এ ছাড়া ঢাকা ও পূর্বাচলে সাবেক এ আইজিপির একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে। তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়ার কথাও বলা হয় প্রতিবেদনে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে গত ১৮ এপ্রিল অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
এ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বেনজীর আহমেদ, স্ত্রী জীশান মীর্জা ও তিন মেয়ের নামে ১৯৬টি দলিলে থাকা ৬২৭ বিঘা জমি (২০ হাজার ৭০৩ শতক), ৩৩টি ব্যাংক হিসাব ও ২৫টি কোম্পানিতে বিনিয়োগ রয়েছে বলে সন্ধান পায় দুদক। এরপর এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত।