অসীম রায় (অশ্বিনী) বান্দরবান: কে এলো গেল, কত জন আসবে’ আমরা ঠিকই ভাটা চালাবো। ইটভাটা বন্ধ করবে (পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবান) তাদের সাথে মিলেমিশে আমাদের টেবিল সম্পর্ক। উনারা এখানে এসে দেশি মুরগি খেয়ে যায়। নিয়েও যান। এবছর নতুন ইটভাটা করতে ১২ লাখ ও প্রতিটি ইটভাটার জন্য ৪ লাখ করে দেয়া হয়েছে। মাঝেমধ্যে টুকটাক যে অভিযান করে তা নাটক। লোক দেখানো মাত্র। ২১ বছরের ফাইতংয়ের একটি ইটভাটাও কি ভাঙতে পেরেছে প্রশাসন!
এ ভাবে দম্ভ দেখিয়ে দীপ্তকল্পে সাংবাদিকদের কথাগুলো বলেন লামার এ ইতং ফাদুরছড়া এলাকার সেভেনবিএম ও ইউবিএম ইটভাটার মালিক হা বির খাঁন। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ফাইতং ইউনিয়নের ফাদুরছড়া।
গ্রামে এবছর নতুন করে নির্মিত সেভেনবিএম ইটভাটা তিন পাশে স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কাটছে। ইতিমধ্যে দুইটি বিশাল পাহাড় সাবাড় করেছে এই ব্রিকফিল্ডটি। নতুন করে আরো একটি পাহাড় শুরু করেছে। জ্বালানি হিসাবে মজুদ করা হয়েছে বনের হাজার হাজার ঘনফুট লাকড়ি। এই বিষয়ে কথা হয় এই ভাটার মালিক কবির খাঁনের সাথে। তিনি বলেন, ‘অনুমতি না থাকলেও সবাইকে ম্যানেজ করেই কাজ শুরু করেছি। এখন ভাটা করতে অনুমতি লাগেনা’।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) হিল্লোল বিশ্বাস বলেন, অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ভাটা চালু রাখতে সহযোগিতা করার বিষয়ে তদন্ত করা হবে। ইটভ- -াটার পাহাড় কাটা ও বনের লাকড়ি পুড়ানোর বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ছবি ও তথ্য দেন। আমরা ব্যবস্থা নিব।
স্থানীয়রা জানায়, ফাইতং ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডে গড়ে উঠা ২৮টি ইটভাটার সবগুলো স্কুল, জনবসতি গ্রাম, সবুজ বনাঞ্চল, খালেরপাড় এবং সড়কের পাশে তৈরি করা হয়েছে। গেল বর্ষা থেকে শুরু করে ইটভাটাগুলো স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে যাচ্ছে। ভাটার একমাত্র কাঁচামাল মজুদ মাটি শেষ হওয়ায় নতুন করে আবারো ২৮টি ভাটা স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটছে। যা দেখেও টিনের চশমা দিয়ে আছে পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবান। ব্যাঙের ছাতার মতো অবৈধভাবে গড়ে উঠা ভাটার কারণে পাহাড়ের প্রকৃতির সীমাহীন ক্ষতি হচ্ছে অভিযোগ লে পরিবেশবাদীদের।
এমনকি উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের পাগলিরছড়া থেকে শিবাতলী মে পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার জায়গায় গড়ে উঠেছে ২৮টি ইটভাটা। এবছর পাগলিরছড়া এলাকায় খা বিএমডব্লিউ এবং ফাদুরছড়া এলাকায় সেভেনবিএম নামে নতুন করে আরো দুইটি ইটভাটা হা সৃষ্টি হয়েছে।
ফাইতং মৌজা হেডম্যান উল্লমং মার্মা বলেন, ‘২০০৩ সালে ফাইতং ফাদুরছড়া টা এলাকায় দিদার মৌলভী ও সালে আহমদ নামে দুই ব্যক্তি ইউবিএম নামে একটি ভাটার মধ্য টা ন দিয়ে ইটভাটা কার্যক্রম শুরু করে। তারপর থেকে বাড়তে বাড়তে এখন ভাটা প্রায় ৩০টি। ল যদিও এবছর দুইটি ভাটা বন্ধ রয়েছে। এলাকায় যন্ত্রের গর্জন ও ধুলোবালুতে সবুজ প্রকৃতি হারিয়ে যেতে বসেছে। গত ২১ বছরে প্রায় দেড় শতাধিক পাহাড় হারিয়ে গেছে।’
শুধুমাত্র ফাইতং ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডে ২৮টি অবৈধ ইটভাটা থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক বলেন, ‘কোন প্রকার অনুমতি, মনি অনুমোদন ও ছাড়পত্র ছাড়াই লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে ২৮টি ইটভাটা গড়ে হও উঠেছে।’ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ অনুসারে লাইসেন্স ব্যতীত কোনো ইটভাটা স্থাপন, অবৈধ ইটভাটাগুলো কার্যক্রম শুরু এবং জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার না করার আইন থাকলেও তা মানা হচ্ছেনা। বর্ষা ঋতুর পরপরই পাহাড়ে সবুজ প্রকৃতি সাজতে শুরু হলেও সেই পাহাড়ের বুকে আঘাত শুরু করেছে ইটভাটার মালিকরা।