মেলায় ২০টি স্টলে কুলফি মালাই, তিলের খাজা, শনপাপড়ি, খেজুরের গুড়, গাওয়া ঘি, মটকা চা, ফিলিপাইন গ্যান্ডারী, লুঙ্গি, বেডশীট, গামছা, বেড কভার, ফুল ব্যাগ, রঙিন তোয়ালে, জিন্স প্যান্ট, হাতে তৈরি ব্যাগ, হাত পাখা, মাটির তৈজসপত্র, বিভিন্ন প্রজাতির ছোট বড় মাছসহ প্রায় ১০০ জন উদ্যোক্তা স্থানীয়ভাবে তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন করেন।
রোববার সকাল সাড়ে ১০ টায় বেলুন উড়িয়ে ও ফিতা কেটে মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। উদ্বোধন শেষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তিনি। অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডলের সভাপতি বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মান্নান খান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান লালু সহ অনেকেই। সভায় সঞ্চালনায় ছিলেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী। আলোচনা সভা শেষে স্টল গুলো ঘুরেঘুরে পরিদর্শন করেন অতিথিরা।
উপজেলা প্রশাসন সুত্র জানায়, দেশে বেকারত্ব কমাতে, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে এবং উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য ব্যাপক প্রচার ও প্রসারের লক্ষে মেলায় ২০টি স্টলে কুলফি মালাই, তিলের খাজা, শনপাপড়ি, খেজুরের গুড়, গাওয়া ঘি, মটকা চা, ফিলিপাইন গ্যান্ডারী, লুঙ্গি, বেডশীট, গামছা, বেড কভার, ফুল ব্যাগ, রঙিন তোয়ালে, জিন্স প্যান্ট, হাতে তৈরি ব্যাগ, হাত পাখা, মাটির তৈজসপত্র, বিভিন্ন প্রজাতির ছোট বড় মাছসহ প্রায় ১০০ জন উদ্যোক্তা স্থানীয়ভাবে তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন করেন।
সকালে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে গিয়ে দেখা যায়, উদ্যোক্তারা তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। শিক্ষার্থী, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা – কর্মচারী, শিক্ষার্থী, ক্রেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ মেলায় প্রদর্শন করা পণ্য ঘুরেঘুরে দেখছেন।
এসময় কথা হয় উদ্যোক্তা আরিফিন পারভীন লিজার সাথে। তিনি কুমারখালী উপজেলার একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। উদ্যোক্তার পাশাপাশি তিনি কুমারখালী সরকারি কলেজের স্নাতক অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ২০২০ সালে করোনায় যখন সারা বিশ্ব থমকে দাঁড়ায়। তখন তাঁর কলেজ বন্ধ থাকায় আস্তে আস্তে হতাশায় ভুগছিলেন তিনি। জুলাই মাসে তিনি বাংলাদেশের সব থেকে বড় বিজনেস গ্রুপ উই-এর সন্ধান পান। উইয়ের বিভিন্ন নারীদের সফলতার গল্প পড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য আগ্রহী হন ও কিছু একটা করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। ওই বছরের ২৭ আগস্ট তিনি “Arifin’s Dream”-নামে একটা ফেসবুক পেজ খুলে অনলাইনে মিষ্টি বিক্রি শুরু করেন। এরপর তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে দেশের ৬৪টা জেলায় তিনি মিষ্টি পাঠাতে সক্ষম হন। বর্তমানে দেশের বাইরের অন্তত ২০টি দেশে তিনি মিষ্টি পাঠিয়ে উপার্জন করছেন।
তিনি আরো বলেন, ব্যবসা শুরুর মাত্র ৫৫ দিনে এক লক্ষ টাকার মিষ্টি বিক্রি করেছিলের। কুষ্টিয়া জেলার প্রথম অনলাইন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ১০ লক্ষ টাকার পণ্য বিক্রির রেকোর্ড গড়েছিলেন তিনি। এছাড়াও বর্তমানে তিনি খাঁটি গাওয়া ঘি, চাক ভাঙ্গা মধু, ঘানিতে ভাঙ্গা সরিষার তেল, অর্গানিক নারিকেল তেল, খেজুর গুড়-পাটালি, জামদানি শাড়ি, কুমারখালীর আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্ত বেডশীট, কাঠের বিভিন্ন ধরনের শোপিস সহ বিভিন্ন আইটেম নিয়ে কাজ করছেন। বর্তমানে তাঁর ক্রেতার সংখ্যা প্রায় তিন হাজারের বেশি। তাঁর একাজে সহযোগীতা করতে ৬-৭জন কর্মী নিযুক্ত রয়েছেন। মাত্র ২ বছরে অনলাইনে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি।
আমার উদ্যোক্তা জীবনের সব থেকে বড় সাপোর্টার আমার স্বামী, ছোট বোন, মা- বাবা, ছোট ভাই এবং আমার একমাত্র ছয় বছরের সন্তান। প্রথম থেকে পরিবারের পূর্ণ সাপোর্ট পেয়েছি। আশেপাশের মানুষ কটু কথা বললেও পরিবার আমাকে আগলে রেখেছেন। পরিবারের সাপোর্টে আমি এগিয়ে যাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ।
সফল উদ্যোক্তা হিসেবে বর্তমানে তিনি Women and e-commerce Trust (WE)-গ্রুপের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২২ সালের ৮ আগষ্ট শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিনে বাংলাদেশ আইসিটি মন্ত্রণালয় হতে পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক সম্মাননা পান। ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে কুমারখালী উপজেলা থেকে জয়িতা সম্মাননা পেয়েছেন। গত ২৫ শে জানুয়ারি উই সংগঠন থেকে লাখপতি সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
আঁখি নাজনীন রিপা নামের আরেকজন উদ্যোক্তা বলেন, তিনি হস্ত শিল্প ও সূচিকর্ম নিয়ে কাজ করেন। তিনি উপজেলার পান্টি বাজার এলাকার বাসিন্দা। সংসারের পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর ফেসবুক পেজের নাম ” কণিকা কুটির ” ২০১৮ সালে মাত্র ১০ জন মেয়েকে নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। বর্তমানে তাঁর এউদ্যোক্তার কাজে সহযোগীতা করছেন প্রায় ৬০০ জন নানান বয়সি নারী। তাঁরা ওয়ান পিচ, টু পিচ, থ্রি পিচ, পাঞ্জাবি, বেডশীট, নকশিকাঁথা, বেবি ড্রেস, বেবি কাঁথা, শাল,মাপলার তৈরির কাজ করেন। পণ্য বিক্রি করে তিনি যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছে, তেমনি তাঁর সহযোগীরাও তাঁদের পরিবারে খরচ মেটাতে সহযোগীতা করছেন। এছাড়াও ” ইচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিন ” নামের আরো একটি সংগঠনে ন্যাপকিন নিয়ে কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
মেলায় আসা জগন্নাথপুর ইউনিয়নের তারাপুর এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেন মামুন নামের একজন সফল উদ্যোক্তা বলেন, ১৯৯০ সালে মাত্র ২৫০ টাকা দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনি মাছ চাষ ওহ্যাচারীতে পোনা উৎপন করে প্রায় দুই কোটি ৫০ লক্ষ টাকার মালিক হয়েছেন। এমন মেলায় তাঁকে নিমন্ত্রণ করায় তিনি গর্বিতবোধ করছেন বলে জানায়।
সুধাংশ কুমার ঘোষ বলেন, এভাবে মেলার আয়োজন করলে একদিকে পণ্যের প্রচার ও প্রসার বাড়বে, অন্যদিকে উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হবে, সম্মানিত হবে ও নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল বলেন, দেশের বেকারত্ব কমাতে, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ও উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণের ব্যাপক প্রচার ও প্রসারের লক্ষে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের ভাগ্যবদল ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে তাঁদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করছে প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক মোহামম্দ সাইদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, উদ্যোক্তাদের জন্য উদ্যোক্তা ম্যাপ ও অনলাইন অ্যাপস তৈরির কাজ চলছে। ব্যাপক প্রচারের জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের কথা বলেন তিনি।